অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, সালমান খান থেকে শুরু করে বলিউডের প্রভাবশালীরা
এখন 'চিটাগং'-এর প্রেমে মজেছেন। ছবিটি দেখে সবাই ভূয়সী প্রশংসা করছেন। আর
এই ছবিটি নির্মিত হয়েছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে 'চিটাগং' প্রেক্ষাপট নিয়ে।
বাংলাদেশের চিটাগং প্রেক্ষাপট হলেও শুটিং হয়েছে ভারতেই।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে ১৯৩০ সালে চট্টগ্রামের মাস্টারদা সূর্যসেনের ভূমিকা
ছিল অতুলনীয়। সূর্যসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ঘটনা
দেখা যাবে ছবিটিতে। এটি পরিচালনা করেছেন বেদব্রত পাইন। এতে মাস্টারদার
চরিত্রে অভিনয় করেছেন মনোজ বাজপেয়ি। আরও আছেন নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি, ব্যারি
জন প্রমুখ। ছবিটি ১২ অক্টোবর মুক্তি পেতে যাচ্ছে। এরই মাঝে মুক্তি পেয়েছে
ছবিটির গানের অ্যালবাম। ছবির সংগীত পরিচালনায় ছিলেন শঙ্কর এহসান লয়।
ছবিটির পাশাপাশি এর পরিচালক বেদব্রত পাইনকে নিয়েও উচ্ছ্বাসে ভাসছে বলিউডবাসী। আর এই বেদব্রত পাইন বাংলাদেশের চিটাগংয়েরই ছেলে।
বেদব্রত পাইন ছিলেন নাসার বিজ্ঞানী, এখন বলিউডের চিত্রপরিচালক। ছিলেন
ডিজিটাল ফিল্মের মানচিত্র বদলে দেওয়া রেড ক্যামেরার জনক। এখন নিজেই সেই রেড
ক্যামেরাতেই চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের গল্প বলছেন। ছিলেন লস
অ্যাঞ্জেলেসের সাজানো দোতলা বাড়িতে। এসে পড়লেন বান্দ্রায় পেয়িং গেস্ট হয়ে।
সঙ্গে একটা খাট, দুটো স্যুটকেস, কম্পিউটার আর কয়েকটা হার্ড ড্রাইভ।
সম্প্রতি 'চিটাগং' ছবিটির বিশেষ প্রদর্শনীর পর পর আটটি টুইট করেছেন অমিতাভ
বচ্চন। তিনি লিখেছেন, 'বেদব্রত পাইন, নতুন পরিচালক, নাসায় কাজ করছিলেন, রেড
ক্যামেরা আবিষ্কার করেছেন, তারপর মুম্বাইয়ে ছবি বানাবেন বলে সব ছেড়ে
দিয়েছেন।' শাহরুখ খান বলছেন, 'ছবিটা ডিলাইটফুলি ইনটেন্স। এই অভিজ্ঞতার জন্য
ধন্যবাদ বেদ...'।
৪৫ বছর বয়সে ছবি তৈরিতে হাতেখড়ি! যে বয়সে আর পাঁচজন বাঙালি থিতু হতে চান,
সেই বয়সে বেদব্রত সব ছেড়েছুড়ে মুম্বাইয়ে হাজির স্বপ্ন ধাওয়া করতে। নাসায়
নিজের আবিষ্কারের রয়ালিটিই মূলধন। ৫ কোটি টাকা হাতে নিয়ে বেদব্রত নেমে
পড়লেন রীতিমতো পিরিয়ড পিস তৈরির কাজে।
'আগে কোনো দিন তো ফিল্মের সেটে যাইনি। সব কিছুই নতুন লাগত।' সে সময় অনেকেই
ভাবতেন, নাসার বিজ্ঞানী আবার ছবি কী বানাবেন? 'আমি যে কাজটা নিয়ে সিরিয়াস,
সেটা সবাইকে বোঝাতেই অনেক সময় লেগেছে। তবে আমি ভাগ্যবান যে মনোজ বাজপেয়ি,
নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি আর ব্যারি জন আমার ওপরে আস্থা রেখেছিলেন।'
চিন্তায় ছিলেন কলকাতায় বেদব্রতর বাবা-মাও। সেন্ট লরেন্স স্কুল আর খড়গপুর
আইআইটির সাবেক ছাত্রটি একটু বেশিই ঝুঁকি নিচ্ছেন বলে মনে হচ্ছিল ওদেরও।
১২ অক্টোবর মুক্তি পাচ্ছে 'চিটাগং' বেদব্রত এখন ভীষণ ব্যস্ত প্রিমিয়ারের
তোড়জোড় নিয়ে। তারই মধ্যে শুক্রবার কলকাতা আসার কথা। ছেলের প্রিয় মাছের
ল্যাজা আর ট্যাংরা মাছ কিনে রেখেছেন মা। কলকাতাকে ঘিরেও অনেক পরিকল্পনা
বেদব্রতর। একটা ভালো টিম নিয়ে সমসাময়িক সাহিত্যনির্ভর বাংলা ছবি করতে চান।
যেখানে স্ক্রিপ্টই হবে তারকা। 'আমার প্রেরণা ঋত্বিক, সত্যজিৎ, মৃণাল। তবে
আমি সব ছবিই দেখি।'
অমিতাভ বচ্চনের 'জঞ্জির' যেমন ২০ বার দেখেছেন। সেই অমিতাভ, সেই জয়া আজ
বেদব্রতর ছবি দেখে উচ্ছ্বসিত। বচ্চন-তনয় অভিষেকও তো কিছু দিন আগে এই
চট্টগ্রাম-কাহিনি নিয়েই 'খেলে হম জি জানসে' নামে একটি ছবি করেছিলেন!
বেদব্রত বলছেন, 'জয়াজির এসে আমাকে জড়িয়ে ধরা, আমাকে নিয়ে অমিতাভের টুইট সব
যেন একটা রূপকথা।' অমিতাভ একা নন। গোটা বলিউডই বেদব্রতকে ডেকে বলছে, এত দিন
কোথায় ছিলেন? অনিল কাপুর, বিশাল ভরদ্বাজ, সুধীর মিশ্র, শাবানা আজমি,
কঙ্কনা সেনশর্মা_ ছবি দেখতে এসেছিলেন সবাই। ছবিটির পরিবেশনা-পর্ব থেকেই
বেদব্রতকে সর্বতোভাবে সাহায্য করে গিয়েছেন অনুরাগ কাশ্যপ। 'ফটোগ্রাফাররা
শাহরুখকে ছবি তুলতে অনুরোধ করছিলেন। শাহরুখ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ওকে
ফ্রেমে থাকতেই হবে।'
রাতে অটো ধরে পেয়িং গেস্টের খুপরিতে ফিরতে ফিরতে বুধবার কত কথাই মনে পড়ছিল
বেদব্রতর। 'যখন চাকরি ছেড়েছিলাম, বাবা বলেছিলেন একটা ক্যারেক্টার
সার্টিফিকেট নিয়ে রেখো নাসা থেকে। তাতে যেন বলা থাকে, তুমি ভালো কাজ কর। আর
তোমাকে নাসা ছাড়িয়ে দেয়নি।' কিন্তু সেই চিঠিটা নিয়ে রাখা হয়নি। তাতে কোনো
সমস্যাও নেই। এখন তো সবাই জানেন, বেদব্রত সত্যিই ভালো কাজ জানেন।